রাঙ্গামাটিকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার দাবী ইসলামিক ফ্রন্টের
চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামিক ফ্রন্টের কিয়ামুল লাইল অনুষ্ঠানে- অধ্যক্ষ আল্লামা জুবাইর
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবী ।।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব জাতীয় নেতা অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেছেন,- সম্প্রতি প্রবল বর্ষণে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে ৬ জন সেনা সদস্য সহ ১৫৪ জন মানুষের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা সত্যিই বেদনাদায়ক। গোটা পার্বত্যাঞ্চলে চলছে এখন শোকের মাতম। স্বজনহারাদের করুণ আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। রাঙ্গামাটির প্রধান সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ক্রমাগত দাম বৃদ্ধি পেয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বহির্ভুত হয়ে পড়েছে। পানি দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় প্রয়োজনীয় ঔষধ-পথ্যও পাচ্ছেনা মানুষ। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘিœত হওয়ায় গোটা অঞ্চলেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বাড়ী-ঘর হারিয়ে উন্মুক্ত আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে অসংখ্য মানুষ। রাঙ্গামাটির এ ভয়াবহ অবস্থাকে মানবিক বিপর্যয় বলে অভিহিত করে আল্লামা জুবাইর রাঙ্গামাটি জেলাকে অবিলম্বে দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবী জানিয়েছেন। একইসাথে বিপর্যস্ত অসহায় মানুষদের জীবন রক্ষায় ত্রাণ তৎপরতা জোর দার করারও দাবী জানান। উপরন্তু দূর্গত মানুষদের পূর্ণবাসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সরকার ও দেশের বিত্তবানদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি সম্প্রতি মাননীয় অর্থমন্ত্রী কর্তৃক ২০১৭-২০১৮ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বলেন,- বর্তমানে তৈরী পোশাক শিল্প ও বস্ত্রখাতের অপরাপর উপখাতে ১ শতাংশ হারে কর কর্তনের প্রস্তাবনা মোটেও যৌক্তিক নই। এমনিতেই তৈরী পোশাক শিল্প সহ বস্ত্রখাত খুবই সংকটকাল অতিক্রম করছে। ব্যাংকের অধিক সুদ, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়াতে এ খাত হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। তাই পোশাক শিল্প ও বস্ত্রখাতের অন্যান্য উপখাতে অগ্রিম কর প্রস্তাবনা পূণঃনির্ধারন আবশ্যক। এছাড়াও দেশে ৪০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ কর্পোরেট কর এর প্রভিশন কোনভাবেই বিনিয়োগ সহায়ক নয়। এমনকি বিশ্বের কোন দেশে কর্পোরেট কর আমাদের দেশের মত নয়। করের অতিমাত্রিক চাপে সাধারণ গ্রাহক দিশেহারা। নতুন কোন বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেনা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই বিনিয়োগ উৎসাহিত ও বৃদ্ধির স্বার্থে কর্পোরেট কর ন্যুনতম ৫ শতাংশ কমিয়ে আনা আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন।
আলহাজ্ব এইচ.এম.মুজিবুল হক শুক্কুর বলেন,- ২০১৭-২০১৮ সালের এবারকার প্রস্তাবিত বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাস্তবায়ন। কেননা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতি, ঘুষ ও অনিয়ম। উল্লেখ্য যে, বিগত বছর দেশের কোন রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকার পরও বিনিয়োগ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তথাপিও বিগত অর্থ বছরে আর্থিক খাতের অনিয়ম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০০ হাজার কোটি টাকা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লোপাট করা হয়েছে। সরকারি ৪টি ব্যাংক থেকে স্বনামে-বেনামে কোটি-কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। কাজেই অর্থনৈতিক খাতে স্বচ্ছতা আনয়নে কার্যকর ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। আলহাজ্ব সাহাবুদ্দিন বলেন,- কিয়ামুল লাইল মাহফিল একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। যেখানে ¯্রষ্টার সন্তুষ্টির অভিপ্রায়ে সারা রাতব্যাপী জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী ও জিকির আজকারে মশগুল থাকে ধর্মপ্রাণ মানুষ। এধরণের মাহফিল বিশুদ্ধ চরিত্র তথা নৈতিক মূল্যবোধ অর্জনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে নি:সন্দেহে।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও ইসলামী ছাত্রসেনা চট্টগ্রাম মহানগরের যৌথ উদ্যোগে গত-১৬ জুন ২০১৭ ইং রোজ শুক্রবার নগরীর আসকার দীঘির পাড়স্থ অভিজাত কমিউনিটি সেন্টার রীমা কনভেনশনে রাত ১০টা হতে সেহেরী পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কিয়ামুল লাইল মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দানকালে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম নগর ইসলামিক ফ্রন্টের সভাপতি আলহাজ্ব এইচ.এম.মুজিবুল হক শুক্কুর এর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত মাহফিলে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,- চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি জনাব আলহাজ্ব সাহাব উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,- ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আল্লামা এস.এম. ফরিদ উদ্দিন, যুগ্ন মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা কাজী আনোয়ারুল ইসলাম খান, আঞ্জুমানে খুদ্দামুল মোসলেমীন দুবাই শাখার সভাপতি হাফেজ মোহাম্মদ আমিন, ওমান শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, আঞ্জুমানে খুদ্দামুল মোসলেমীন আবুধাবি শাখার সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী রেজা, ফয়জুল বারী সিনিয়র মাদ্রাসার প্রভাষক হাফেজ মাওলানা একরামুল হক, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,- ইসলামী ছাত্রসেনা কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা এম কফিল উদ্দিন রানা। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,- খান এ সবুর,আব্দুর রহমান মান্না, মাওলানা জাকের আহমদ সিদ্দীকি, অধ্যক্ষ মাওলানা নুরুল আমিন, এস.এম. আব্দুল করিম তারেক,এম মহিউল আলম চৌধুরী, এ.এম.মঈন উদ্দিন চৌধুরী হালিম, হাফেজ কারী ফরিদুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মাওলানা হাসমত আলী তাহেরী, মাওলানা মহিউদ্দীন তাহেরী, আলহাজ্ব মুহাম্মদ ইলিয়াছ খান ইমু, জসিম উদ্দিন মাহমুদ, মাওলানা মোহাম্মদ মোর্শেদুল আলম, আহছানুল আলম, এস.এম. আবু সাদেক ছিটু, আহমদ রেজা, কাজী সুলতান আহমদ প্রমুখ। উল্লেখ্য যে, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও নাতে রসূল (স:) এর মাধ্যমে শুরু হওয়া কিয়ামুল লাইল মাহফিলে কোরআনে হাফেজদের মাধ্যমে খতমে কোরআন সম্পন্ন করা হয়। রাত্রি ২টায় হাজারও ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতার অংশগ্রহণে জামায়াতের সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা হয়। এছাড়া আমল ও আখলাকের উপর ওলামায়েকেরামগণ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। অত:পর আখেরী মোনাজাতে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ছাত্রসেনা ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কর্মী সমর্থক ছাড়াও অসংখ্য মানুষ যোগদান করেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কান্না বিজড়িত কন্ঠে উ”্চারিত আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠে। পরিশেষে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের অংশগ্রহণে এক সাথে সেহেরী সম্পন্ন করা হয়।