খবরের বিস্তারিত...


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর নির্বাচনী ইশতেহার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর নির্বাচনী ইশতেহার

ঐতিহাসিক পরিক্রমায় ভারতবর্ষ দীর্ঘ প্রায় ২শত বছর বৃটিশদের পরাধীন থাকার পর অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে পরিশেষে ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক পৃথক দুটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে অত্র এলাকায়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট অঞ্চল হিসেবে পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তরিত হয়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়। কিন্তু ধর্ম ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের দু অঞ্চলের মানুষের পারস্পরিক ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নৃ-তাত্তি¡ক ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান হয় যোজন-যোজন দূরত্ব। তাছাড়া তৎকালীন দু’অঞ্চলের ভৌগলিক দুরত্বও ছিল প্রায় ১৫০০ মাইল। যা অভিন্ন রাষ্ট্র হওয়ার পথে বিরাট অন্তরায়। এরপরও জাতীয় জীবনে একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার মহান স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয় এতদাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু বিধি বাম! পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পরবর্তী শোষণ, জুলুম ও বঞ্চনামুক্ত ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি শুধু স্বপ্নই থেকে গেল। পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরাচার পূর্ব বাংলায় অমানবিক অত্যাচার, শোষণ নীপিড়ন, বৈষম্য ও নির্যাতন বরাবরই অব্যাহত রাখে। শুধু তাই নয়, এই অশুভ শক্তি পূর্ব বাংলার মানুষের ভাষার অধিকার পর্যন্ত ছিনতাই করার পাঁয়তারা করে রক্তাক্ত সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয় এতদাঞ্চলের মানুষকে। কারণ এরা ছিল মজ্জাগতভাবেই বাংলা ও বাঙ্গালী বিদ্বেষী। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিতে সূচিত ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। বাংলার অকুতোভয় সৈনিক শহীদ রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতের রক্তের উপর দিয়ে মাতৃভাষা বাংলা লাভ করে রাষ্ট্রভাষার আনুষ্ঠানিক মর্যাদা। এরপরও থেমে থাকেনি পাকিস্তানীদের ষড়যন্ত্র। যৎকারণে ধারাবাহিক সংগ্রামী প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংঘটিত হয় একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। যেটি ছিল জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের জিহাদ। দীর্ঘ ৯ মাসের এই মুক্তিযুদ্ধে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রাণ বিসর্জন দেয় প্রায় ৩০ লক্ষ দেশপ্রেমিক মানুষ। সম্ভ্রমহানি ঘটে প্রায় ২ লক্ষ মা-বোনের। এছাড়াও এ যুদ্ধে সূফীবাদী আদর্শের অনুসারী আলেম-ওলামাদের সরব ও সক্রিয় ভূমিকা ছিল লক্ষ্যনীয়। অতঃপর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক শাসক গোষ্টির ২৫ বছরের শোষণ, বঞ্চনা, জুলুম ও নির্যাতনের অক্টোপাস থেকে মুক্তিলাভ করে বাঙালি জাতি। বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় একটি দেশ-বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য যে, বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। যার সীমান্তে অন্য কোন মুসলিম দেশের অস্থিত্ব নেই। ফলত: মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা হলেও এটি আউলিয়ায়ে কেরাম এবং সূফি সাধকদের শত শত বছরের অসাম্প্রদায়িক সাধনার ফসল। উপরন্তু ৯২ শতাংশ মুসলমানের আবাস, এদেশের ৯০ শতাংশই সুন্নী মুসলমান। যেদেশের মানুষের সার্বিক জীবনাচরণ, কৃষ্টি, সভ্যতার প্রতিটি পরতে পরতে দৃশ্যমান হয়ে থাকে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন। যে দেশে ইসলামী রীতিনীতি বিরুদ্ধ যে কোন বিষয়ে জিরো টলারেন্স প্রদর্শিত হয় প্রায় সকলেরই। এদেশের সর্বত্র ইসলামী রাজনীতির অনুকুল পরিবেশ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। ঐতিহাসিকভাবেই এদেশ হচ্ছে ইসলামী রাজনীতির অন্যতম উর্বর ক্ষেত্র। তাই দেশ ও জাতিকে সর্বপ্রকার মানবগড়া মতবাদের অক্টোপাস থেকে মুক্ত করে কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকারে ১৯৯০ সালের ২১ ডিসেম্বরের এক ঐতিহাসিক দিবসে এদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’র। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সংগঠন জনগুরুত্বপূর্ণ বিবিধ বিষয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে দেশব্যাপী ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টিতে সক্ষমতা অর্জন করে। অতঃপর ২০০৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয় অত্র সংগঠন। যার নিবন্ধন নং-৩০। প্রতীক-চেয়ার। সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশীল ঘোষণা করে এবং ০৭ জানুয়ারী ২০২৪ইং নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ একটি নিয়মতান্ত্রিক, নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে উক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ নিন্মোক্ত ২৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছে। যা নিন্মরূপঃ
১। নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার ও সরকারের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন।
যেটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং শুধু আইনের অধীন হবে।
২। দূর্নীতির মুলোৎপাটনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ। দুর্নীতি বাংলাদেশে বিরাট এক সমস্যা। যা উন্নয়ন অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়। বিশ^অঙ্গনে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে অধিকতর পরিচিতির ফলে বিদেশী বিনিয়োগ আশাব্যাঞ্জক নয় এবং শিল্পায়ন পশ্চাৎমূখী। তাই দুর্নীতির মূলোৎপাটনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে।
৩। শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কারসহ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা। শিক্ষার সকল স্তরে গতিশীলতা অনয়নে উৎপাদনমুখী সমাজ ও যুগ চাহিদার সাথে সংগতিপূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বজনীন একটি অভিন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৪ । কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে কৃষি নির্ভর শিল্পের প্রসার ও কৃষিকে উৎসাহিত করা। কৃষিকে উপেক্ষা করে কখনো মানবজাতির সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি নিশ্চিত হতে পারে না। তাই কৃষি নির্ভর শিল্পের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে কৃষিকে অধিকতর উৎসাহিত করা হবে।
৫। শিল্প-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা। শিল্পায়ন ব্যতিরেকে জাতীয় উৎপাদন এর প্রবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্যকে স্বপক্ষে আনা তথা স্বনির্ভরতা অর্জন কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের অর্থ সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উৎসাহিত করা হবে।
৬। নারীর ক্ষমতায়ন তথা মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এদের বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের কাঙ্খিত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় না। তাই নারীর মর্যাদা ও অধিকারকে সুসংহত করাসহ ইসলামী রীতি অনুযায়ী তাদের সমান অধিকার প্রদান করা হবে।
৭। যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। দেশে মোট জনসংখ্যার ২ কোটিরও অধিক যুবক রয়েছে। এদের শক্তি ও সম্পদে পরিণত করে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ দক্ষতা বাড়ানো হবে। স্বল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত যুবকদের জন্য কারিগরী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
৮। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন-সম্প্রসারণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। মেডিকেল শিক্ষার মান উন্নয়ন ও বিদ্যমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।
৯। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
তথ্য প্রযুক্তির উপর দক্ষতা অর্জনে দেশের স্কুল পর্যায় থেকে উচ্চতর স্তর পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১০। এন জি ও সমূহকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জাতীয় উন্নয়ন কর্মকাÐ সম্প্রসারিত করা।
১১। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মান-মর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বত্র সমান অধিকার প্রয়োগের নিশ্চিয়তা বিধানসহ বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইনের অবসান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১২। শিশু অধিকার সুরক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যকর শিশুবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা। শিশুরা জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার। সমৃদ্ধ দেশ গঠনে এরাই হচ্ছে নেয়ামক শক্তি। তাই তাদের অধিকার সুরক্ষাসহ পথশিশুদের যথাযথভাবে চিহ্নিত পূর্বক হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১৩। ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে দেশের উপজেলা, জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ায় রাষ্ট্রের সহযোগিতা পৌছে দেয়ার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ১৪ । প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আনায়নের মাধ্যমে দক্ষতা সম্পন্ন জনপ্রশাসন গড়ে তোলা।
গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি জনপ্রশাসন গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক সংস্কারসহ আইন ও বিধিমালা প্রনয়ণ করা হবে।
১৫। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা । পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পাতলা প্লাষ্টিকের ব্যাগ ও প্লাষ্টিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বৃক্ষ নিধন বন্ধ,
বনাঞ্চল ও জীব বৈচিত্র রক্ষা করাসহ পরিকল্পিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১৬। উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক সমর সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত একটি দক্ষ প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলা। সামরিক ও বেসামরিক জনগণের মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক দূরত্বের অবসান করে দেশ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনীকে জনগণের শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও অহংকারের বিষয়ে পরিনত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
১৭। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষনই পররাষ্ট্রনীতিকে অন্যতম ভিত্তি হিসেবে গড়ে তোলা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হবে সকল দেশের সাথে বন্ধু ভাবাপন্ন। যেকোন দেশের সাথে বৈরীতা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষনই হবে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম ভিত্তি।
১৮। একটি শক্তিশালী ও কার্যকর জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ। জাতীয় সংসদই হবে সর্বপ্রকার জাতীয় সমস্যা সমাধানের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ফলে সংসদে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
১৯। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ। ইসলাম ও জাতীয় চেতনার সাথে সংগতি রেখে সংবাদপত্র, বেতার-টেলিভিশন, ইন্টারনেট ও অপরাপর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। গণমাধ্যম কর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও এদের উপর নির্যাতনের যে কোন অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
২০। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশমান ধারা অব্যাহত রাখা। সকল নাগরিক এর স্বাধীন ও নিরুপদ্রবভাবে স্ব-স্ব ধর্ম, কর্ম পালনের নিশ্চয়তা বিধান, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ সরকারী যে কোন কার্যক্রমের ন্যায়সংগত ও যৌক্তিক সমালোচনা করার পূর্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করা হবে। উপরন্তু সকল নিবর্তনমূলক কালাকানুন বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২১। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের কবল থেকে দেশ ও জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
২২। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন করা।
এদেশের ভৌত অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত অনেক পশ্চাৎমূখী। তাই এ লক্ষ্যে- সড়ক ও উপসড়ক সমূহের মেরামত ও সংরক্ষণ নতুন-নতুন সড়ক নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ব্রীজ, কালভাট, ¯øুইজ গেইট নির্মাণ সহ গৃহায়ণ, পরিবহন, বন্দর উন্নয়ন ও নির্মাণে টেকসই নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। পাশর্^বর্তী রাষ্ট্র সমূহের সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। খাল ও নদী খননের মাধ্যমে নৌপথের আধুনিকায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২৩। দেশ ও জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় পানি সমস্যার আশু সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ। ১৯৯৬ সালে সম্পাদিত গঙ্গাচুক্তি বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে ভারতের সাথে পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়া হবে। পানি দূষন রোধ সহ পানিবান্ধব নীতিমালা প্রনয়ণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২৪ । মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
মুক্তিযুদ্ধের তিন আদর্শ যথাক্রমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।
২৫। অবহেলিত হিজড়া সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
হিজরা জনগোষ্টীও এদেশের নাগরিক। এদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাসহ হিজরাদের জন্য পৃথক হিজরা পল্লী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
২৬। বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তদের ভাতার পরিমাণ ও পরিধি বৃদ্ধি করা।
২৭। অনগ্রসর জনগোষ্টি ও প্রতিবন্ধিদের জন্য কোটা চালু করা।

গোটা পৃথিবী, পৃথিবীর সম্পদ, শাসন, নির্দেশ-আদেশ তথা যাবতীয় কার্যনির্বাহের একমাত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। মানুষ সহ সকল সৃষ্টিই হচ্ছেন আল্লাহর বান্দা। আর আল্লাহ সার্বিক কিছু সৃজন করেছেন মানুষের জন্যই। সুতরাং শাসন করার ক্ষমতাও সংরক্ষন করেন একমাত্র তিনি। যেহেতু আল্লাহই সৃষ্টির চ‚ড়ান্ত প্রতিপালক, সেহেতু ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য সর্বক্ষেত্রে আল্লাহরই প্রভৃত্ব মেনে নেয়া তথা তাবৎ জনগোষ্ঠির কল্যাণমূলক ন্যায়ভিত্তিক প্রতিপালন। এসব দৃষ্টিভঙ্গী ও জীবন ব্যবস্থা থেকেই উৎসারিত হয় ইসলামী সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছু। এরই বাস্তবরূপ মূর্ত হয়ে উঠে রাসুলুল্লাহ (স.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রে। তাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ২৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। আশা করি ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ কর্তৃক উপস্থাপিত এ বিজ্ঞান সম্মত কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ার প্রতীকে আপনার মূল্যবান রায় প্রদান করবেন।

[related_post themes="flat" id="2099"]